Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বীচিকলা চাষ

কলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল। এ ফল সারা বছর ধরে পাওয়া যায়। আবাদি জমি ও ফলের উৎপাদনের দিক থেকে এ ফলের  অবস্থান বাংলাদেশে প্রথম স্থানে রয়েছে। পুষ্টিতে ভরপুর, ফল-সবজি উভয়ভাবে এ ফল আহার করা যায়। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলার বাজারমূল্য কম। কাজেই এ ফল ধনী-দরিদ্র সবারই ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। একই কারণে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের অধিকাংশ পুষ্টির চাহিদা পূরণে কলার গুরুত্ব অপরিসীম। তরকারি হিসেবেও কলা অতি জনপ্রিয় পুষ্টিকর সবজি। তরকারি হিসেবে কলার থোড় ও মোচার কদর খুব বেশি। এমনকি কাঁচা কলার ছিলকা (উপরের অংশ) দিয়ে তৈরি ভর্তা অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কলাগাছের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে প্রাপ্ত ছাই দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ সিদ্ধ পানিতে কাপড় পরিষ্কার করে সাবানের খরচ বাঁচায়।


পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার :  কলাতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ক্যালোরি, ভিটামিন-বি২ ও ভিটামিন-সি রয়েছে। এতে আরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-বি১, চর্বি ও আমিষ। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া নিরাময়ে সহজে হজমযোগ্য খাদ্য হিসাবে রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও দুর্বলতা দূরীকরণে কাঁচা কলার তরকারি আহার করার জন্য ডাক্তারগণ পরমর্শ দিয়ে থাকেন। হিন্দুদের পূজা পার্বন ও বিয়ের অনুষ্ঠানে কলা ও কলা গাছের প্রয়োজন হয়।


গরু-ছাগলের খাদ্য হিসাবেও কলাপাতা ও অন্যান্য অংশ ব্যবহার করা হয়। কেঁচো সার তৈরি করতে হলেও কলা গাছের বিভিন্ন অংশ অন্যতম উপকরণ হিসাবে কাজে লাগে। দেশের নিম্নাঞ্চলে প্রতি বছরই অতি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে পথঘাট তলিয়ে যায়। এ সময় হাটবাজারে বা অল্প দূরত্বে চলা ফেরার প্রয়োজনে সহজ ও সস্তায় কলার ভেলা অন্যতম বাহন হিসাবে কাজ করে। বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চলে ভাসমান বীজতলা হিসাবে কলার ভেলা ব্যবহার করার সুবিধা আছে এবং এ প্রচলন দিন দিন বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে/হাওর এলাকায় বসতবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধের ধারে মাটির ভাঙন রোধে ভূমি ক্ষয় রোধক হিসাবে কলাগাছ ব্যবহার করা হয়। এ ব্যবস্থায় কলাগাছ ঢেউয়ের আঘাত থেকে রাস্তা/বাঁধকে রক্ষা করে।


জাত : এ দেশে আবাদকৃত কলার জাত প্রচুর রয়েছে। গাছের আকার ভেদে ও উচ্চতা বিবেচনায় এগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- ক. খাটো জাতের কলা, খ. মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট জাতের কলা এবং গ. লম্বা জাতের কলা।


১. খাটো জাতের কলা সিঙ্গাপুরী, কাবুলী, মেহের সাগর (জয়েন্ট গর্ভারনার), এগুলো খাটো জাত দলভুক্ত কলা। এ সব জাতের গাছ লম্বায় কম হয় এবং কিছুটা ছায়া বা আধা ছায়ায় কলা ফলানো যায়। বসতবাড়ির আশ পাশে এ জাতের কলার তুলনামূলক আবাদ  বেশি। কেবল মেহের সাগর, রঙিন মেহের সাগর নামক অপর খাটো জাতগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এ জাতের কলার আকার ও প্রকৃতি অনেকটা সাগর কলার মতো। তবে প্রতি কাঁদিতে সাগর কলার চেয়ে  ফলের সংখ্যা ২-৩ গুণ বেশি হয়। প্রতি কাঁদিতে ১৭০-২২০টা কলা ধরতে দেখা যায়।


মাঝারি আকার বিশিষ্ট জাত : অমৃত সাগর, সবরি, অনুপম, মালভোগ, মর্তমান, চাঁপা, অগ্নিশ্বর, কবরী এ দলভুক্ত জাত। বৃহত্তর রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ এলাকায় বাগান আকারে মূলত সবরি, সাগর, মেহের সাগর ও বিভিন্ন তরকারি কলা চাষ করা হয়। তবে বৃহত্তর বরিশাল ও পার্বত্য জেলাতে  চাঁপা, সবরি ও বিভিন্ন জাতের তরকারি কলার  চাষ প্রচলন বেশি।


লম্বাকৃতির জাত : কাঁঠালি, আনাজি ও অন্যান্য তরকারি কলাসহ বীচিকলা, বাংলা কলা, গেঁড়া কলা লম্বা জাত দলভুক্ত। বীচিকলা দেশের সবখানেই রাস্তার ধারে অনেকটা বিনা যত্নে জন্মায়। কম আয়ের মানুষ বিশেষ করে মহিলারা এ জাতের কলা চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক কালে তরকারি কলা সীমিত আকারে কেবল বাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত জায়গায় চাষ করা হতো। বর্তমানে এ কলা তরকারি হিসাবে চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও  ভালো দাম পাওয়ার কারণে তরকারি কলার আবাদ প্রবণতা বাড়ছে। অনেক সময় এ কলা সাগর কলার চেয়েও বেশি দামে বেচাকেনা হয়। তাই এসব তরকারি কলা বাগান আকারে চাষ করতে চাষিরা যথেষ্ট আগ্রহী হচ্ছে। এক কালে পার্বত্য ও পাশের জেলাগুলোতে কেবল চাঁপা কলা কম যত্নে চাষ করার প্রচলন ছিল। এখন কলা চাষে ও জাত নির্বাচনে চাষিরা সচেতন। বর্তমানে এসব এলাকায় বাংলা কলা, তরকারি কলা ও কিছু পরিমাণ সবরি ও সাগর কলা বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করার প্রবণতা চাষি পর্যায়ে বাড়ছে।


বীচি/এঁটেল কলা চাষ ও সম্প্রসারণ গুরুত্ব :  যুগ যুগ ধরে এ দেশে বীচিকলার চাষ দেশের সব জেলাতেই কমবেশি হয়ে থাকে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী জেলার রাস্তা ও বাঁধের ধারে বীচিকলার আবাদ  বেশি হয়। রাস্তার ও বাঁধের ধারে যে সব পরিবারের আবাসন গড়ে উঠেছে, তারা নিকটস্থ রাস্তার ধারে ২০-৩০টা করে বীচিকলার চারা রোপণ করে তার সুফল বছরব্যাপী ভোগ করে থাকে।


আবাদ সুবিধা : আবাদি জমিতে কেবল কিছু লাভজনক প্রচলিত জাতের কলা (সাগর, সবরি, বাংলা কলা, আনাজি) চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এসব জাতের কলা ২-৩ বছরের বেশি জমিতে বাগান আকারে রাখা যায় না। অথচ বীচিকলা একবার রোপণ করে দীর্ঘকাল ধরে ফলন পেতে তেমন অসুবিধা হয় না। অন্যান্য কলার তুলনায় এ জাতের কলা গাছের উচ্চতা বেশি। তাই রোপণের কয়েক মাসের মধ্যেই ৫ - ৭ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে। দ্রুত বৃদ্ধি ও গাছ লম্বা হওয়ার কারণে পাতা, ফুল, ফল সবই গরু-ছাগলের নাগালের বাইরে চলে যায়। বেড়া বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই এসব কলা গাছ বেড়ে উঠে। অন্য প্রচলিত কলার জাতগুলো সঠিক যত্ন ছাড়া সুফল আশা করা যায় না। অথচ বীচি কলা কম যত্নেও প্রতিকূল পরিবেশে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে এবং তা থেকে ফুল, ফল, থোড় সব বিনা খরচে পাওয়া যায়। এ জাতের কলাগাছ বেশি লম্বা ও শক্ত হওয়ায় এ গাছ দিয়ে তৈরি ভেলা বেশি টেকসই হয়। একই কারণে ভাসমান বীজতলা তৈরির জন্য এ জাতের কলা বেশি উপযোগী ।


দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর পাশাপাশি হাওর অঞ্চলে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে তাতে আমন ধানের চারা  তৈরি ও বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মসলার চারা তৈরি করা এবং তার আবাদ জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। হাওর এলাকায় ভাসমান সবজি বীজতলা তৈরির জন্য প্রয়োজনমতো কচুরিপানা পাওয়া সহজ হয় না। একই কারণে কলার ভেলা তৈরি করে কচুরিপানার অভাব পূরণ করা যায়। এ কাজে সহজেই বীচিকলাগাছ বিকল্প  হিসাবে ব্যবহার সুবিধা বিরাজমান।


বীচিকলা ফল-সবজি হিসেবে ব্যবহার : গ্রামগঞ্জের মানুষের বীচি কলা ফল হিসাবে আহার করার যথেষ্ট কদর আছে। অন্য কলাতে বীজ নেই, অথচ এ জাতের কলা বীজসহ খাওয়ার সুবিধার কারণে বাড়তি প্রেটিন, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আঁশ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রাপ্তি যোগ হয়। একই কারণে আয়ুর্বেদী মতে সুস্বাস্থ্যের জন্য দরিদ্র জনসাধারণের জন্য কম খরচে ফলের পুষ্টি প্রাপ্তিতে বীচিকলা অন্যতম অবদান রাখে।


অন্য তরকারি কলার মতো বীচিকলা রান্না করে খাবার প্রচলন অনেক অঞ্চলে রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বীচিকলা মাছ দিয়ে রান্না করে সবজি হিসাবে মানুষ বিচিত্র স্বাদ আহরণ করে থাকে। কাঁচা কলা পানিতে সিদ্ধ করলে সহজেই  বীজগুলো আলাদা হয়ে যায়, রান্নায় ঝামেলা হয় না। অন্য কলার মোচা থেকে বীচি কলার মোচার আকার বড় ও আহার্য অংশ বেশি। কলা সংগ্রহ শেষে কলার থোড় রান্না করে খাওয়ার প্রচলন সব এলাকাতেই আছে। এছাড়া অন্য কলার চেয়ে বীচিকলার থোড়ের আকার, পরিমাণ ও স্বাদ বেশি।


বীচিকলা চাষ সম্প্রসারণ : অন্য কলার মতো বীচিকলা বাগান আকারে জমিতে চাষ করা হয় না। রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের ধারের অব্যবহৃত অংশে এ জাতের কলা চাষের সুবিধা আছে। একই কারণে বিভিন্ন জেলার ছোট বড় রাস্তা/খালের ধারে বসবাসরত ভূমিহীন পরিবার কিছু সংখ্যক বীচিকলা গাছ লাগিয়ে তা থেকে সারাবছর ধরে পরিবারের ফল-সবজির চাহিদা পূরণ করে ও তা বিক্রি করে বাড়তি আয় করে থাকে। একবার বীচিকলা গাছ লাগিয়ে ৮-১০ বছর পর্যন্ত একাধারে তা থেকে অনেকেই সুফল আহরণ করে থাকে। এসব বিবিধ গুরুত্ব বিবেচনায় এনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারাদেশে প্রদর্শনী আকারে সুবিধামতো অব্যবহৃত কমিউনিটি স্থানে বীচিকলা সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক ব্লকে ১০ ফুট দূরত্বে কম পক্ষে ১০টা বীচিকলার চারা বিশিষ্ট একটা করে প্রদর্শনী বাগান স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে একটা সার্কুলার জারি করেছেন।


বংশবিস্তার :  কলা গাছের সাকার বা গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। এ পদ্ধতি অঙ্গজ হওয়ায় এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারায় মাতৃ গুণাগুণ বজায় থাকে। চাষাবাদে এ পদ্ধতির প্রচলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। গাছের গোড়া থেকে দু’ধরনের চারা বা সাকার গজাতে দেখা যায়। এক ধরনের চারা লম্বাটে ও গোড়া মোটা হয়। এ চারা সোর্ড সাকার নামে পরিচিত, এ ধরনের চারা  রোপণ উপযোগী। অন্য চারার আকার একটু ছোট, পাতা চওড়া, চারার গোড়ার অংশ চিকন হয়। এ চারা ওয়াটার সাকার নামে পরিচিত। ওয়াটার সাকার দিয়ে কোন কলা বাগান স্থাপন করা উচিত হবে না।  


চারা সংগ্রহ :  নতুন বাগান থেকে সুস্থ সবল ৩-৪ মাস বয়স্ক সোর্ড সাকার সংগ্রহ করা প্রয়োজন। চারা সংগ্রহকালে মাতৃ কলা গাছ যেন বেশি আঘাত প্রাপ্ত না হয় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। চারা সংগ্রহ শেষে গাছের ক্ষত অংশে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে ভেজাতে হবে এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি দিয়ে গাছের গোড়া উঁচু করে মাটি চেপে শক্ত করে ঢেকে দিতে হয়। চারা আলাদা করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মাটির নিচের গোড়ার অংশ শিকড়সহ থাকে। কলা সংগ্রহ শেষে গাছ গোড়া থেকে সাবধানে অপসারণ করে নিয়ে তা আধা ছায়ায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করে শোধন করে আবর্জনা দিয়ে ২-৩ সপ্তাহ ঢেকে রাখলে তা থেকে যথেষ্ট নতুন চারা গাজাবে। সেগুলো আলাদা করে নিয়ে ১৫-২০ সেমি. দূরত্বে বীজতলায় রোপণ করে রেখে দেয়ার এক মাস পর সেগুলো উঠিয়ে বাগানে রোপণ করতে হবে। রাস্তা/বাঁধের ধারে অনেক পরিবার নিজ ব্যবস্থাপনায় কিছু সংখ্যক বীচিকলা আবাদ করতে দেখা যায়। সেখান থেকে র্৩-র্৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সুস্থ-সবল লম্বাকৃতির চারা (সোর্ড সাকার) সাবধানে সংগ্রহ করে তা দিয়ে প্রদর্শনী বাগান সৃষ্টি ও তা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা সহজেই নেয়া যায়।  


স্থান নির্বাচন ও গর্ত তৈরি : রাস্তা/বাঁধের ধারে বীচিকলা চাষের জন্য স্থান নির্বাচনে যথেষ্ট সচেতন হতে হয়। রাস্তা/বাঁধের প্রধান অংশ অবস্থান ভেদে ৩ -৮ ফুট অংশ ছেড়ে ঢালু অংশে চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করতে হয়। একেবারে কাছাকাছি রোপণ করা হলে পরে চলাচল অসুবিধা হয়, গাছ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়তে বাধাগ্রস্ত হয়। বর্ষাকালে যে পর্যন্ত পানি উঠে সে কিনারের ওপর বরাবর চারা রোপণ করা ভালো।


চারা রোপণের জন্য দুই ফুট চওড়া ও দুই ফুট গভীর করে গর্ত তৈরি করা প্রয়োজন। এ সময় সাবধান হতে হবে যেন উঠানো মাটি নিচে গড়িয়ে না পড়ে। ঢালু অংশের ওপরের ভাগ নিম্না অংশের চেয়ে গর্তের গভীরতা বেশি হতে হবে। অর্থাৎ হাফমুন টেরাস আদলে তা করা যেতে পারে। তাতে মাটি ক্ষয়রোধ হবে, গাছের শিকড় ঠিকমতো মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া যাবে। এ জাতের কলা আবাদে সার দেয়ার তেমন প্রচলন নেই। তবে সার প্রয়োগ করা হলে ফলন অনেক গুণ বেড়ে যায়। প্রতি গর্তে যে পরিমাণ সার দেয়ার প্রয়োজন তা হলো ঃ পচা গোবর বা আবর্জনা পচা ১০ কেজি, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৩০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অক্সাইড ১০ গ্রাম, বরিক এসিড ১০ গ্রাম। সমস্ত সার উর্বর মাটির (টপ সয়েল) সাথে একত্রে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তাতে পানি সেচ দিয়ে মাদা তৈরি করার কাজ শেষ করতে হয়।


চারা রোপণ :  কলার চারা মাদার মাঝখানে ছোট গর্ত করে এমনভাবে বসাতে হবে যেন সম্পূর্ণ গোড়ার অংশসহ আরও ১০-১৫ সেমি. কাণ্ডের অংশ মাটির নিচে থাকে। চারা রোপণ করে গোড়ার মাটি চেপে দিয়ে গাছকে সোজা থাকতে সহায়তা করতে হবে। বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরই চারা রোপণ করা যায়। বর্ষার শেষে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস অথবা বর্ষার আগে মে-জুন মাসে কলার চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়। এ সময় কলার চারা রোপণ করলে  গাছের বৃদ্ধি বেশি ও অধিক ফলন পাওয়া যায। তবে চারা রোপণ করে চারার গোড়া ছেড়ে নিচের অংশে এক ফুট তফাতে মাটি দিয়ে হাফমুন আকারে বাঁধ দিলে ভালো হয়। তাতে মাটির ক্ষয়রোধ হবে, বৃষ্টির পানি ও উর্বর মাটি গোড়ায় জমতে সহায়ক হবে। চারা রোপণের এক মাস পর পর প্রতি চারার গোড়ার চারদিকে পচা গোবর ৫ কেজি, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম এবং এমওপি ৭০ গ্রাম হারে সার দিতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। দুইমাসের ব্যবধানে গাছের গোড়ার চারধারে এ সারগুলো প্রয়োগ করা অব্যাহত রাখতে হয়। মাটিতে রস কম থাকলে অবশ্যই প্রত্যেক বার সার প্রয়োগের পর পর পানি সেচ দিয়ে গাছের গোড়া ভালোভাবে ভেজাতে হবে।


পানি সেচ ও নিকাশ :  বর্ষা মৌসুমে কোনো অবস্থাতে যেন কলাগাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে নিয়মিত সেচ দেয়া ভালো। তবে বর্ষাকালে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না।


পরিচর্যা :  কলাগাছের গোড়া সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছের পাতা হলুদ না হওয়া পর্যন্ত কাঁচা পাতা কেটে ফেলা যাবে না। গাছের গোড়ায় নতুন চারা গজালে ২-৩টা বিভিন্ন বয়সের সুস্থ-সবল চারা রেখে অবশিষ্ট গাজানো চারা মাটি বরাবর কেটে ফেলতে হবে। অন্যথায় রোপিত কলাগাছ কম বাড়বে, ফলনও কম হবে। গাছ বড় হলে পর্যায়ক্রমে রোপিত গাছের গোড়া থেকে গজানো বিভিন্ন বয়সের ২-৩টা  করে চারাকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এ ব্যবস্থায় প্রথম কলা সংগ্রহ শেষে   ২-৩ মাসের ব্যবধানে তাতে (মুড়ি ফসলে) নিয়মিত ফুল-ফল ধরা অব্যাহত থাকবে। কাঁদিতে ফল ধরা শেষ হওয়া মাত্র কাঁদি থেকে মোচা কেটে দিতে হবে। অন্যথায় কলার বাড়-বাড়ন্ত কম হবে। কলার মোচাগুলো সময়মতো সংগ্রহ করে সবজি হিসাবে আহার বা বিক্রি করে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা যায়। কলার কাঁদি বড় হলে অনেক সময় রোদের তাপে ঝলসে যেতে পারে। এ জন্য কিছু সংখ্যক ছোট ছিদ্র বিশিষ্ট রঙিন (সবুজ/নীল) পলিথিন কভার দিয়ে কাঁদি ঢেকে দিতে হয়। এ ব্যবস্থায় একই সঙ্গে কিছু পোকার হাত থেকে কলা রক্ষা পাবে এবং কলার আকার ও রঙ আকর্ষণীয় হবে।


বিভিন্ন বয়সের ২-৩টা সুস্থ সবল চারা/গাছ রেখে অবশিষ্ট চারা নিয়মিত মাটি বরাবর ছেঁটে দেয়া অথবা অন্যত্রে তা উঠিয়ে রোপণ করে এ  জাতের কলা সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নেয়া উচিত হবে। কলা পুষ্ট হলে তা যথাসময়ে সংগ্রহ করা জরুরি। অন্যথায় পাখি/বাদুড় ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়বে। কলা সংগ্রহকালে কাঁদি কেটে নেয়ার পর ফলন্ত গাছ একবারে মাটি বরাবর কেটে নেয়া ঠিক হবে না। গাছের গোড়া থেকে ৪-৫ ফুট উপরে তেরছা করে কেটে ফল সংগ্রহ করে বাকি অংশ রেখে দেয়া ভালো হয়। এ ব্যবস্থায় ফল সংগ্রহীত গাছের যেসব খাদ্য সংরক্ষিত থাকে তা মূল গাছের গোড়া থেকে গজানো কলার চারা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এতে মুড়ি চারা দ্রুত বাড়ে ও বেশি ফলন দেয়।


পোকামাকড় ও রোগ :  বীচিকলাগাছে অন্য জাতের কলার তুলনায় পোকা ও রোগের উপদ্রব কম হয়। কাজেই চাষিরা এ জাতের কলা চাষে  রোগ পোকা দমনব্যবস্থা তেমন একটা নেয় না।  কলাতে বিটল পোকা ও কা- ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ মাঝে মধ্যে দেখা যায়। ফেনভেলারেট জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম) এবং বাসুডিন/ফুরাডন দলীয় দানাদার কীটনাশক (গাছ প্রতি ১৫-২০ গ্রাম) ব্যবহারে এসব পোকা দমনে সুফল পাওয়া যায়। অন্য জাতের কলাতে গুচ্ছ মাথা রোগ (বাঞ্চিটপ), পানামা, সিগাটোকা ও অ্যানথ্রাকনোজ নামক রোগের উপদ্রব দেখা গেলেও বীচিকলাতে এ ধরনের রোগের আক্রমণ কম হয়। এসব উপদ্রব রোধে ৩-৪ বছরের ব্যবধানে ফাঁকা অংশে নতুনভাবে রোগমুক্ত চারা রোপণ ব্যবস্থা নেয়া ভালো।  


কলা সংগ্রহ :  কলা ভালোভাবে পুষ্ট হলে সময়মতো কলার কাঁদি কেটে নেয়া দরকার। খেয়াল রাখতে হবে কাঁদি যেন কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। মাটিতে মাদুর, কাগজ বা পাতা বিছিয়ে কাঁদিগুলো খাড়া করে রাখতে হয়। কলা কোনোভাবে ঘসা খেলে সে অংশে কালো দাগ পড়ে। পরিবহনকালেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন অত্যাধিক ঝাকুনিতে কলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কলার মোচা ধরা থেকে শুরু করে  কলা পুষ্ট হতে প্রায় ৩-৪ মাস সময় লেগে যায়। প্রতি কাঁদিতে প্রচুর  (প্রায় ২০০টা) কলা ধরে। একেক কাঁদির কলার ওজন প্রায় ১৫-২০ কেজি হয়।

কম যত্নে ও কম খরচে প্রচুর পুষ্টিকর ফল সবজির উৎস বীচিকলা চাষ সম্প্রসারণ উদ্যোগ গ্রহণ করা সবারই কর্তব্য।

 

এম. এনামুল হক*

*মহাপরিচালক (অব.), ডিএই এবং বিশেষজ্ঞপুল (APA) সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয়


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon